• ঢাকা
  • |
  • শনিবার ১০ই কার্তিক ১৪৩২ রাত ১১:৩০:০১ (25-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

সৌদিপ্রবাসী শ্রমিকদের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত

বিশেষ প্রতিনিধি: সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী শ্রম ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে। প্রায় ৫০ বছর ধরে চলা 'কাফালা' বা পৃষ্ঠপোষকতা পদ্ধতি আজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর ফলে দেশটিতে থাকা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদেশি শ্রমিক সরাসরি উপকৃত হবেন, যারা এখন থেকে চাকরি পরিবর্তন, দেশ ত্যাগ এবং ভিসা নবায়নের মতো সিদ্ধান্তগুলো নিজেদের ইচ্ছানুসারে নিতে পারবেন। এই নতুন চুক্তিভিত্তিক কর্মসংস্থান মডেলটি সৌদি শ্রম মন্ত্রকের মাধ্যমে জারি করা হয়েছে, যা 'ভিশন ২০৩০' কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।কাফালা পদ্ধতি, যা ১৯৭০-এর দশক থেকে সৌদি আরবের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি বিদেশি শ্রমিকদের উপর নির্ভরশীলতার প্রতীক ছিল, শ্রমিকদের নিয়োগকর্তাদের উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল করে রেখেছিল। এই ব্যবস্থায় শ্রমিকরা চাকরি ছাড়তে বা দেশ ছাড়তে চাইলে নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া কোনো উপায় ছিল না, যা প্রায়শই শোষণ, মজুরি অবহেলা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বারবার এই পদ্ধতির সমালোচনা করে এসেছে।নতুন মডেলে, শ্রমিক-নিয়োগকর্তার সম্পর্ক চুক্তিভিত্তিক হবে, যেখানে শ্রমিকরা নিজেরাই ভিসা নবায়ন করতে পারবেন এবং চাকরি পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র ৬০ দিনের নোটিশ দিলেই যথেষ্ট।সৌদি শ্রম মন্ত্রী আহমেদ আল-রাজহি বলেন, ‘এই সংস্কারটি আমাদের অর্থনীতিকে আরও স্বচ্ছ এবং ন্যায়ভিত্তিক করে তুলবে। বিদেশি শ্রমিকরা এখন সৌদি আরবের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে কাজ করবেন, শোষিত শ্রমশক্তি নয়।’ এই পরিবর্তনের ফলে দেশের নির্মাণ, তেলশিল্প এবং পরিষেবা খাতে কাজ করা লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৮ শতাংশ বিদেশি শ্রমিক, যাদের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং মিশর থেকে আগতরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই সংস্কারটি বিশেষ করে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর শ্রমিকদের জন্য স্বাগতম, যারা বছরে লক্ষ লক্ষ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়ে তাদের দেশের অর্থনীতিকে সমর্থন করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এটি আমাদের ২০ লক্ষেরও বেশি কাজকর্মশীল নাগরিকের জন্য একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আমরা সৌদি কর্তৃপক্ষের সাথে সহযোগিতা বাড়িয়ে এই সুবিধাগুলো নিশ্চিত করব।’যদিও এই সংস্কারটি প্রশংসিত হলেও, বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা জারি করেছেন যে বাস্তবায়নের সময় নিয়োগকর্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। আগামী মাসগুলোতে সরকারি অ্যাপ এবং অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে এই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে। এই পরিবর্তন সৌদি আরবকে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম-বান্ধব দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পথে এক মাইলফলক।