• ঢাকা
  • |
  • সোমবার ১লা পৌষ ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৭:৫৯:৪৫ (15-Dec-2025)
  • - ৩৩° সে:
সংবাদ ছবি

১৫ ডিসেম্বর: রাঙ্গুনিয়ার স্বাধীনতার গল্প

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি: ডিসেম্বরের কুয়াশাচ্ছন্ন সেই রাত। কর্ণফুলী নদীর ঢেউ নিঃশব্দে ছুঁয়ে যাচ্ছিল তীর। অথচ পাহাড়, বন আর জনপদের ভেতর ভেতর তখন জমে উঠছিল এক অদম্য প্রতিজ্ঞা, হানাদারমুক্ত হবে রাঙ্গুনিয়া।১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। সারা দেশের মতো রাঙ্গুনিয়াতেও তখন যুদ্ধের শেষ অধ্যায়। বিজয় আর মাত্র এক দিন দূরে। পাকিস্তানি বাহিনীর শক্ত ঘাঁটিগুলো তখনো ছড়িয়ে আছে এই জনপদজুড়ে। রাঙ্গুনিয়া আদর্শ বহুমুখী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, রানিরহাট উচ্চবিদ্যালয়, পোমরা উচ্চবিদ্যালয় আর কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী সরফভাটার চিরিঙ্গা বন বিট কার্যালয়। কিন্তু এই ঘাঁটিগুলোকেই চূড়ান্তভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।মুক্তিযোদ্ধা অশোক মিত্র কারবারির নেতৃত্বে সেদিন সন্ধ্যা থেকেই কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে কোদালা চা-বাগান, শিলক, পদুয়া ও সরফভাটার পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেন মুক্তিযোদ্ধারা। রাত গভীর হলে চারদিক থেকে একযোগে শুরু হয় আক্রমণ। গোলাগুলির শব্দে কেঁপে ওঠে পাহাড়, বন আর জনপদ।হঠাৎ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই রাতের সংঘর্ষে শতাধিক হানাদার সৈন্য গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। নিহতদের লাশ কর্ণফুলী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়, যেন যুদ্ধের নির্মম সাক্ষী হয়ে নদী বয়ে নেয় রক্তাক্ত ইতিহাস।আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে ১৫ ডিসেম্বর ভোরের আলো ফোটার আগেই পাকিস্তানি বাহিনী রাঙ্গুনিয়া ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরের দিকে পালিয়ে যায়। তবে পিছু হটার সময় তাদের বর্বরতার ছাপ রেখে যায়। রানীরহাট বাজারসহ কয়েকটি ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।সকাল হতেই দৃশ্যপট বদলে যায়। পরিত্যক্ত ঘাঁটিগুলোর দখল নেন মুক্তিযোদ্ধারা। উড়তে থাকে লাল-সবুজের পতাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগঞ্জ থেকে মানুষ ছুটে আসে। কণ্ঠে একটাই স্লোগান, স্বাধীন বাংলা। রাঙ্গুনিয়াজুড়ে বের হয় বিজয় মিছিল।বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুছ মিয়া বলেন, ‘ডিসেম্বরের শুরু থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধে হানাদার বাহিনী রাঙ্গুনিয়া থেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করে। ১৫ ডিসেম্বর ছিল সেই সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতি।’এই বিজয় সহজে আসেনি। ১৪ ডিসেম্বরের সেই ভয়াল সংঘর্ষে আবদুস ছোবহান, মতিউর রহমান, বিপুল দাশ, ফণী মহাজন, মোহন বাঁশি, রাতুল বড়ুয়া, বাবুল মুৎসুদ্দি, সায়ের আহমদ, নাজের শাহ, আবুল কাসেম, বশির আহমদ, দৌলত মিয়াসহ প্রায় ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তাঁদের রক্তেই লেখা হয় রাঙ্গুনিয়ার মুক্তির ইতিহাস।আজ ১৫ ডিসেম্বর। রাঙ্গুনিয়া হানাদারমুক্ত দিবস। এটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি সাহস, আত্মত্যাগ আর বিজয়ের স্মারক। নতুন প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাস শুধু জানার বিষয় নয়, ধারণ করার দায়ও বটে।