ঘেরের আইলে সবজি চাষে বদলে যাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি
রামপাল (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: রামপাল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাছের ঘেরের আইলে সবজি চাষ করে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে স্থানীয় কৃষকরা। আগে যে জমি বছরের বেশিরভাগ সময় অব্যবহৃত পড়ে থাকত, এখন সেই জমিতে সারা বছর চাষাবাদের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করছেন কৃষকরা। এতে তাদের পরিবারে আসছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। বদলাচ্ছে রামপালের গ্রামীণ অর্থনীতিও।রামপালের গৌরম্ভা, পেড়িখালী, রামপাল সদর, রাজনগর, বাইনতলা, উজলকুড়, হুড়কা, মল্লিকের বেড়, বাঁশতলী ও ভোজপাতিয়া ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, মৎস্যঘেরের আইলে চাষ করা হচ্ছে লাউ, করলা, ঢেঁড়স, ঝিঙা, শসা, কুমড়া, বেগুনসহ নানা প্রজাতির সবজি। একই সঙ্গে মাছ ও সবজি উৎপাদনের ফলে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। যা কৃষকদের লাভের পথ আরো প্রশস্ত করেছে।সোনাকুড় গ্রামের স্থানীয় কৃষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে শুধু মাছের উপর নির্ভর করতাম। এখন ঘেরের আইলে সবজি লাগিয়ে প্রতি মৌসুমে বাড়তি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। এতে সংসারের খরচ অনেকটা মিটে যাচ্ছে।ভরসাপুর গ্রামের নারী কৃষক সুফিয়া বেগম জানান, আমি ঘেরের ধারে করলা ও লাউ লাগিয়েছি। বাড়ির কাজ সামলে এগুলোর যত্ন নিতে কষ্ট হয় না। প্রতিদিন কিছু না কিছু বিক্রি হয়। ফলে হাত খরচও উঠে আসে।একই কথা বলেন সিংগড়বুনিয়া গ্রামের আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, আমি সবজি চাষ করি সংসারের চাহিদা মেটানোর জন্য। নিজের চাহিদা মিটিয়ে কিছু বিক্রি করি। এতে সংসারের খরচ বাঁচে, কিছু সাশ্রয় হয়।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে রামপালের প্রায় ৪৬৫ হেক্টর জমির ঘেরের আইলে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি চাষ হয়েছে। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, এই পদ্ধতি শুধু তাদের আয় বৃদ্ধি করছে না, এটি খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি সরবরাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওয়ালিউল ইসলাম জানান, ‘আমরা কৃষকদের ঘেরের আইলে সবজি চাষে উৎসাহিত করছি। কোনো জমি যাতে পতিত না থাকে এবং মাছ চাষও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে রামপালের বিভিন্ন ইউনিয়নে সবজি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’তিনি আরও বলেন, ‘এভাবে সবজি চাষে কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদনের দিকেও আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, বীজ, সার ও প্রযুক্তিগত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই প্রতিটি ঘেরের আইল সবুজে ভরে উঠুক।’