লালপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুরে উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী আয়োজিত বিজয় মেলায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের পাশাপাশি পিঠাপুলির স্টল বসানো হয়।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও মহিলা বিষয়ক দপ্তরসহ একাধিক দপ্তর এ মেলায় অংশ নেয়। তবে এই বিজয় মেলার পিঠা স্টল ঘিরে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ।


উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে পরিচালিত পিঠা স্টলের জন্য উপজেলার ১১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার নার্গিস সুলতানা-এমন অভিযোগ শিক্ষক সমাজের একাংশের।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বিদ্যালয় থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এই টাকা আদায় করা হয়েছে। অনেক শিক্ষক মনে করছেন, বিজয় দিবসের মতো রাষ্ট্রীয় একটি অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছার নামে জোরপূর্বক অর্থ আদায় কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নার্গিস সুলতানা টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “বিজয় মেলায় স্টল করার জন্য যে টাকা নেওয়া হয়েছে, তা শিক্ষকদের সিদ্ধান্তেই হয়েছে। এখানে আমার কোনো একক সিদ্ধান্ত নেই।”
তিনি আরও বলেন, “অফিস সহায়ক বুলবুলিকে আমি আসার আগ থেকেই এখানে রাখা হয়েছে। তার কোনো অফিসিয়াল নিয়োগ নেই। আমি ও আমার এটিওরা মাসে কিছু টাকা দিয়ে তার বেতন পরিশোধ করি।”
তবে শিক্ষা অফিসারের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন একাধিক প্রধান শিক্ষক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রধান শিক্ষক বলেন, “শিক্ষা অফিসারের নিয়ন্ত্রণে চাকরি করতে হয়। তাই মুখ খুলতে পারি না। পিঠা উৎসবের এই চাঁদা মূলত শিক্ষা অফিসারের সিদ্ধান্তেই ধার্য করা হয়েছে।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “উপজেলার ১১২টি বিদ্যালয় থেকে মাসিক চাঁদা তুলে উপজেলা শিক্ষা অফিসে ‘বুলবুলি’ নামের এক নারীকে অফিস সহায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। বুলবুলি স্যারদের চা-নাস্তা দেওয়ার কাজ করেন।
বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এসব অন্যায় মেনে নিতে হচ্ছে।”
শিক্ষকদের একটি অংশ মনে করছেন, সরকারি দপ্তরে নিয়োগবিহীন কর্মচারী রেখে নিয়মিত চাঁদার মাধ্যমে বেতন দেওয়া প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও সরকারি বিধিবিধানের পরিপন্থী। পাশাপাশি বিজয় দিবসের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে অর্থ সংগ্রহের নামে শিক্ষকদের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করাও অনভিপ্রেত।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষকরা। তাদের দাবি, অভিযোগগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষককে জোরপূর্বক চাঁদা দিতে না হয় এবং সরকারি দপ্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
(এই ওয়েবসাইটের যেকোনো কিছু অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি)
© 2025, এশিয়ান অনলাইন টিভি  |  সর্বস্বত্ব সংরক্ষিতDeveloped by Future IT
Recent comments
Latest Comments section by users
No comment available