• ঢাকা
  • |
  • রবিবার ১১ই কার্তিক ১৪৩২ সকাল ১১:৩৮:৪৮ (26-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

বোন্দার নেস্টিং নামে সাদা মাছির একটি নতুন প্রজাতি সনাক্ত, নারিকেল শিল্পে ক্ষতির শঙ্কা

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ রাত ০৮:৩৯:১৪

সংবাদ ছবি

বাকৃবি প্রতিনিধি: বাংলাদেশে নারিকেল গাছে সাদা মাছির আরো একটি নতুন প্রজাতি সনাক্ত করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।

সম্প্রতি গবেষণা দলের সদস্যরা সাদা মাছির বিভিন্ন প্রজাতি শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে  যশোর, খুলনা এবং বাগেরহাটে গেলে সেখানে একটি নতুন প্রজাতির উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। পরে গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের পরে নতুন প্রজাতিটি শনাক্ত করা হয়। নতুন এই প্রজাতি নারিকেল শিল্পের জন্য হুমকি হতে পারে বলে মনে করছেন গবেষক দল। এই নতুন প্রজাতির সাদা মাছির বৈজ্ঞানিক নাম প্যারালেইরোডেস বোন্দারি। যাকে বাংলায় বলা হয় বোন্দার নেস্টিং সাদামাছি। বিষয়টি জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক বাকৃবির কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. গোপাল দাস। "রুগোজ স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই এর বায়ো-ইকোলজি এবং মরফো-মলিকুলার অধ্যয়ন এবং গবেষণাগারে এই পোকার বিরুদ্ধে কিছু নতুন জেনারেশনের কীটনাশকের কার্যকারিতা মূল্যায়ন" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালিত হচ্ছে।

Ad
Ad

বর্তমানে কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) অর্থায়নে  অধ্যাপক ড. গোপাল দাস ২০২৩ সাল থেকে এই পোকাটির বিভিন্ন বিষয়ের উপর গবেষণা করছেন। বর্তমানে তার গবেষণা সহকারী হিসেবে কাজ করছে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. সোহেল রানা।

Ad

গবেষক ড. গোপাল দাস বলেন, দেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল নারিকেল। এক সময় গ্রামাঞ্চলে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কম-বেশি নারিকেল গাছ ছিল। এর ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছিল অনেক ছোটখাট শিল্প। তবে সম্প্রতি নারিকেল উৎপাদনকারী এবং ব্যবসায়ীদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ, মরছে গাছ, কমেছে ফলন।  বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহ এই নারিকেল শিল্পের সাথে জড়িত। বিভিন্ন কারণে দিন দিন নারিকেলের ফলন কমছে। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ অন্যতম। রুগোস স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই  (বৈজ্ঞানিক নাম: আলিউরিডিকাস  রুজিওপারকিউলেটাস) যা নারিকেলের সাদা মাছি নামে পরিচিত, একটি এক্সটিক বা বিদেশি পোকা। এই পোকাটি বাংলাদেশের নারিকেল শিল্পে একরকম বিপর্যয় ঘটিয়েছে। নারিকেল চাষীদের সর্বনাশকারী এ সাদা মাছি। ২০১৯ সালে বারির কীটতত্ববিদগণ বাংলাদেশে এর উপস্থিতি সনাক্ত করেন । আমরা দেশব্যাপী জরিপের মাধ্যমে এই পোকার ৬১ টি পোষক উদ্ভিদ সনাক্ত করেছি, যা আমেরিকার একটি জার্নালে ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে।  বর্তমানে আমরা এই পোকার বায়ো-ইকোলজি, প্রজাতি সনাক্তকরণ এবং বিভিন্ন জৈব-বালাই নাশাকের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা করছি। প্রজাতি সনাক্তকরণের জন্য আমরা দেশের ৩০টি এগ্রো-ইকোলজিক্যাল জোন থেকে সাদামাছি সংগ্রহ করেছি। তারই ধারাবাহিকতায় যশোর, খুলনা এবং বাগেরহাটে থেকে নারিকেল গাছ থেকে সাদামাছি সংগ্রহ করে গবেষণাগারে আনা হয়। পরবর্তীতে এই সাদা মাছিগুলির মর্ফোলজিক্যাল বা বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য গবেষণাগারে অধ্যয়ন করা হয় এবং সেখানে কিছু ভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়।

গবেষক নতুন প্রজাতির মাছির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানান, নতুন প্রজাতির সাদামাছি আকারে খুব ছোট এবং নারিকেলের সাদা মাছির প্রায় অর্ধেক (১.১-১.২ মিমি লম্বা)। এই পোকাটির সামনের পাখায় ক্রস-চিহ্নযুক্ত ধূসর বর্ণের ব্যান্ড রয়েছে। অন্য সাদা মাছি স্পাইরাল আকারে ডিম পারে, তবে এটি মোম ও তুলা  দিয়ে পাখির মত বাসা তৈরি করে সেখানে ডিম পাড়ে। এদের ডিমে পাতার বোটার মত থাকে যা অন্য  সাদা মাছিতে দেখা যায় না। এদের পিউপেরিয়াম সমতল এবং কোন লেজের মত প্রজেকশন থাকে না। বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে সনাক্ত করা হলেও মলিকুলার অধ্যয়নের কাজ চলমান রয়েছে। অন্যান্য যেসব এগ্রো-ইকোলোজিক্যাল জোন থেকে সাদামাছি সংগ্রহ করা হয়েছিল সেখানে এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।

নতুন প্রজাতির মাছি হুমকির কারণ হওয়ার বিষয়ে ড. গোপাল দাস বলেন ,  ২০১৮ সালে এটি ভারতের কেরালায় এবং ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে সনাক্ত করা হয়।  ২০২৪ সালের প্রথমদিকে এই পোকাটি শ্রীলঙ্কায় সনাক্ত করা হয় । বোন্দার নেস্টিং সাদা মাছির কি কি পোষক উদ্ভিদ রয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আক্রমণের তীব্রতা এবং ক্ষতির মাত্রা কেমন সেসব বিষয়ে বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। ভারত ও শ্রীলংকার কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই নতুন পোকাটির ডিম পাড়ার সময়কাল ও প্রজনন সক্ষমতা নারিকেলের সাদা মাছির থেকেও বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নারিকেলের সাদা মাছির সংখ্যা কমে গিয়ে বোন্দার নেস্টিং সাদা মাছির সংখ্যা অনেক বেড়ে গিয়েছে। আমাদের এই অঞ্চলে জলবায়ুর ধরণ মোটামুটি একই রকম হওয়ায় বাংলাদেশেও এই পোকাটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং নারিকেলের উৎপাদন আরো হুমকির মুখে পড়তে পারে।

বিষয়টি নিয়ে অধিকতর গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক গোপাল দাস বলেন, এই নতুন পোকাটির ক্ষতির ধরণ নারিকেলের সাদা মাছির মতোই তবে ক্ষতির ভয়াবহতা কেমন সেটি জানতে হলে এর বায়োলজি, প্রজনন সক্ষমতা, বৃদ্ধির হার ইত্যাদি নিয়ে গভীরতর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।  তিনি আরো বলেন, নির্বিচারে কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং এর উপকারী পোকাসমূহকে প্রাকৃতিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ



সংবাদ ছবি
ঝিনাইদহে আলেমদের সঙ্গে বিএনপির মতবিনিময়
২৬ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ১১:১৭:১৪


সংবাদ ছবি
সত্যের পথে বিএনপি অটল : ফয়জী
২৬ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ১১:০৭:৩৬





সংবাদ ছবি
সেনবাগে বিএনপির ৩১ দফার লিফলেট বিতরণ
২৬ অক্টোবর ২০২৫ সকাল ০৯:৩৮:৩২


Follow Us