• ঢাকা
  • |
  • মঙ্গলবার ১৩ই কার্তিক ১৪৩২ সন্ধ্যা ০৬:০৩:৪৭ (28-Oct-2025)
  • - ৩৩° সে:

নোবিপ্রবি

সন্ধ্যা নামলেই যেন হয়ে ওঠে মাদক ও অশ্লীলতার স্বর্গরাজ্য, প্রশাসনের নীরব ভূমিকা

২৮ অক্টোবর ২০২৫ দুপুর ০২:৫২:৫৬

সংবাদ ছবি

নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম পীঠস্থান নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) দিনদিন পরিণত হচ্ছে মাদকের স্বর্গরাজ্যে। হরহামেশাই ঘটছে মাদক উদ্ধারের ঘটনা। পাশাপাশি বেড়ে চলেছে অশ্লীলতা। তবে এসব ঘটনায় প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ও কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত কয়েকটি ঘটনা নতুন করে জন্ম দিয়েছে আলোচনা-সমালোচনার।

Ad
Ad

জানা যায়, গত ২২ অক্টোবর বুধবার অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্র ও ছাত্রীকে রাতের বেলায় ক্যাম্পাসের প্রশান্তি পার্কে ‘আপত্তিকর অবস্থায়' আটক করে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। পরের দিন ২৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ওশানোগ্রাফি বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে মাদকাসক্ত অবস্থায় আটক করে ছাত্র পরামর্শক অফিসে নিয়ে যায় কয়েকজন শিক্ষার্থী। সেখানে উপস্থিত সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের সামনেই মাদকাসক্ত ওই শিক্ষার্থী অসম্ভব রকমের উগ্র আচরণ করেন। সর্বশেষ ২৫ অক্টোবর শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট ভবনে আইআইটি বিভাগের এক ছাত্র ও ছাত্রীকে ‘উলঙ্গ অবস্থায়’ হাতেনাতে ধরেন সিনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থী।

Ad

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি স্থানে রাতের বেলায় শিক্ষার্থীদের বিচরণ কম হওয়ায় সেসব জায়গায় মাদকাসক্তদের আড্ডা বসে। রাতে অন্ধকারাচ্ছন্ন এসব জায়গাগুলোতে চলে অশ্লীলতা। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রশান্তি পার্ক, অ্যাকাডেমিক ভবন ৩ এর নির্মাণাধীন বিভিন্ন কক্ষ, নীলদিঘির পার্শ্ববর্তী স্থান, প্রভোস্ট বিল্ডিং, মন্দিরের পার্শ্ববর্তী এলাকা, ময়নারদ্বীপসহ আরো কয়েকটি স্থান। বিশেষ করে রাতের অন্ধকার নেমে আসলে এসব জায়গায় শুরু হয় মাদকাসক্তদের আনাগোনা, চলে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। এছাড়া মাঝেমধ্যে বহিরাগতরাও ক্যাম্পাসে এসেই মাদকের আড্ডা বসায়। যা নিয়ে এর আগে সংবাদও প্রকাশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ঘটনা সার্বিক নিরাপত্তা ও নৈতিকতার চরম অবনতিকেই নির্দেশ করে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বেশিরভাগ সময় বহিরাগত মাদক কারবারিরা এসে শিক্ষার্থীদের মাদকদ্রব্য সরবরাহ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পকেট গেইট, আলু ওয়ালার মোড় ও প্রধান গেইট সংলগ্ন এলাকাতে হয় মাদকের আদান-প্রদান। মাঝেমধ্যে তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে ঢুকেই সরবরাহ করে মাদক। মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদান-প্রদান হয় গাঁজার।

এদিকে অশ্লীলতা ও মাদকসংক্রান্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইনফরমেশন সায়েন্স বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী লাইলাতুল জান্নাত (লিজা) বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে মাদক সেবনের প্রবণতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশ ও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে মাদক সেবনের ঘটনায় আমরা নারী শিক্ষার্থীরা গভীর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দুঃখজনকভাবে প্রশাসন ও প্রক্টোরিয়াল বডির দৃশ্যমান কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনো পরিলক্ষিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি মাদকবিরোধী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে একটি নিরাপদ, মাদকমুক্ত ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা হোক।”

এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. মেহেদী হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় যা শিক্ষার পবিত্র স্থান হওয়ার কথা, সেখানে এখন প্রায়ই দেখা যাচ্ছে কিছু শিক্ষার্থী মাদক সেবনের মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো কয়েকজন হাতে-নাতে ধরা পড়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এই উদাসীনতা কেবল প্রশাসনের দায়িত্বহীনতারই প্রমাণ নয়, বরং এটি অপরাধীদের আরও উৎসাহিত করছে।

তিনি আরও বলেন, মাদক সেবন শুধু ব্যক্তিকে ধ্বংস করে না, এটি পুরো শিক্ষাব্যবস্থা ও সামাজিক পরিবেশকে বিষিয়ে তোলে। বিশ্ববিদ্যালয় একটি জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে আসে। কিন্তু মাদকের ছোঁয়ায় সেই পরিবেশ নষ্ট হয়ে পড়ছে। অনেক শিক্ষার্থী এখন আতঙ্ক ও হতাশায় ভুগছে, কারণ ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ও নৈতিক মান দ্রুত অবনতি ঘটছে। শিক্ষার পরিবেশ হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক গতি ও মর্যাদা। এখনই সময় প্রশাসনকে কঠোর ও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে, জড়িতদের চিহ্নিত করে এবং প্রয়োজনে বহিষ্কারসহ শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন শিক্ষক সমাজও। এসব ঘটনাকে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও জ্ঞান চর্চায় আগ্রহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলছেন তারা। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মহিবুল ইসলাম বলেন, “সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকাসক্তির যে বিস্তার তা কেবল ব্যক্তিগত ব্যর্থতা নয়, বরং কাঠামোগত ও সাংস্কৃতিক সংকটের প্রতিফলন। এই প্রবণতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চা ও নৈতিক মূল্যবোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে; তাই প্রশাসনিক পদক্ষেপের (মাদকের নিয়ন্ত্রণ, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ, ভিজিলেন্স বৃদ্ধি, রিহ্যাব কার্যক্রম) পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিক পুনর্গঠন ও সচেতনতামূলক সামাজিক উদ্যোগ (নৈতিক শিক্ষার প্রসার, মাদকাসক্তির পরিণামের ব্যাপারে সতর্কতামূলক সভা সেমিনার ইত্যাদি) জরুরি।”

মাদকের বিরুদ্ধে তাদের নীতি ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর এএফএম আরিফুর রহমান বলেন, “কোনো ব্যক্তি প্রক্টরিয়াল বডির হাতে তুলে দেওয়ার পরে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটলেও প্রক্টর নিশ্চিত করেছেন যে দায়িত্ব কেবল তাদের ওপর নয়। আনসার, পুলিশ, প্রভোস্ট এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষও মিলিতভাবে কাজ করবে।”

তিনি আরও জানান, হোস্টেল‑ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা নিশ্চিত না হলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। টিউশন কার্ডসহ রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে সব ছাত্রীকে হলে প্রবেশ করতে হবে। হলে গেট যথাসময়ে বন্ধ রাখলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। প্রক্টরিয়াল বডি প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় বজায় রাখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে যাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট  বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। এসব ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিবো এবং প্রক্টরিয়াল বডিকে আরও শক্তিশালী করবো। বরাবরের মতোই মাদকের বিরুদ্ধে প্রশাসনের জিরো টলারেন্স এবং তা সত্যতা পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” 

Recent comments

Latest Comments section by users

No comment available

সর্বশেষ সংবাদ



সংবাদ ছবি
ইসি থেকেও রিটার্নিং কর্মকর্তা চায় জামায়াত
২৮ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৫:৩৮:২৭



সংবাদ ছবি
অস্ত্র মামলায় সম্রাটের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
২৮ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৪:৩১:৩৫




সংবাদ ছবি
লংগদু সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযান
২৮ অক্টোবর ২০২৫ বিকাল ০৩:২৭:৪৩


Follow Us